রাজবাড়ী শহরের ইংলিশ নিউমার্কেটের সামনে ৯ বছর ধরে চিতই আর ভাপা পিঠা বিক্রি করে শিউলি বেগম। গত বুধবার সন্ধ্যায় তাঁর ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে।
স্বামী অসুস্থ। একমাত্র ছেলে বেকার। দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও বড় মেয়ে দুই নাতিসহ তাঁর সংসারে থাকেন। অভাবের সংসার সামলাতে ৯ বছর ধরে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করেন রাজবাড়ীর শিউলি বেগম। দীর্ঘদিন ধরে চিতই ও ভাপা পিঠা বিক্রি করে পরিচিতি পেয়েছেন। রাজবাড়ী শহরের ইংলিশ ইউ মার্কেটের সামনে প্রতিদিন বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁর পিঠাপুলি বেচাকেনা।
শহর ছেড়ে দূরদূরান্ত থেকে অনেকে শিউলির হাতের পিঠা খেতে আসেন। চিতই পিঠার সঙ্গে আগে শুধু ধনিয়া, শর্ষেভর্তা দিলেও নতুন যোগ হয়েছে চিংড়িভর্তা আর হাঁসের মাংস। হাঁসের মাংসের দাম একটু বেশি পড়লেও ভোজনরসিকেরা বেশ পছন্দ করেন। শিউলিকে সহযোগিতা করেন তাঁর বড় মেয়ে ও এক কিশোর।
শিউলির ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। জানালেন, নিজের জমিজমা না থাকায় শহরের বিনোদপুর নিউ কলোনিতে সরকারি জায়গায় বাস করেন। স্বামী অসুস্থ ও বেকার। দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়েকে ১১ বছর আগে এবং ছোট মেয়েকে চার বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন। ২২ বছর বয়সী ছেলে পড়াশোনা করেনি, কাজও করেন না। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া নিয়ে অশান্তিতে আছেন।
শিউলি বেগম প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম। এত বড় অভাবের সংসার সামলাতে বাধ্য হয়ে ৯ বছর ধরে সড়কে পিঠার ব্যবসা করছেন। চিতই পিঠার সঙ্গে তিন রকমের ভর্তা ও হাঁসের মাংস বিক্রি করেন। একটি চিতই পিঠা ৫ টাকা ও চার টুকরা হাঁসের মাংসের প্লেট ১০০ টাকা করে বিক্রি করেন। প্রতিদিন ২০ কেজি চাল, ঢেঁকি কুড়ানো, ভর্তা, খড়ি, হাঁস, সহযোগীর বেতনসহ চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পুঁজি খাটান। বেচাবিক্রি শেষে দেড় হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। এ টাকা দিয়ে ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি সংসার চালাচ্ছেন।
বড় মেয়ে শাকিলা খাতুনকে ভাপা পিঠা বানানোর কাজ দিয়ে আলাদা পুঁজির ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদিন খেজুর গুড়, খড়িসহ অন্যান্য উপকরণ মিলে আড়াই হাজার টাকা খাটাতে হয়। একটি ভাপা পিঠা ১৫ টাকায় বিক্রি করেন। দিন শেষে তাঁরও ৫০০ টাকার মতো লাভ থাকে। সেটা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলেমেয়ের পড়ালেখায় খরচ করেন।
সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় শিউলির পিঠার দোকানে দেখা গেল, দূরদূরান্তের মানুষ পিঠা ও হাঁসের মাংসের স্বাদ নিতে এসেছেন। কারও প্লেটে চিতই-ভর্তা, কারও প্লেটে ভাপা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আবদুল আহাদ মৃধা সহকর্মীকে নিয়ে পিঠা খেতে এসেছেন। বললেন, ‘দুই বছর ধরে রাজবাড়ী শহরে আছি। গত বছর পিঠা-ভর্তা খেয়ে লোভ ধরেছিল। তাই এবার সহকর্মীকে নিয়ে এসেছি। পিঠার সঙ্গে হাঁসের মাংস খেলাম। মাংসের দাম একটু বেশি। তারপরও শীতের দিনে এমন আয়োজন এড়িয়ে যাওয়া যায় না।’
সিঙ্গাপুরপ্রবাসী গোয়ালন্দের ইয়াকুব হোসেন স্ত্রীকে নিয়ে শহরে কাজে এসেছিলেন। দূর থেকে পিঠার দোকানে ভিড় দেখে খেতে আসেন। নিজে চিতই পিঠা-ভর্তা আর স্ত্রী সাবিহা সুলতানা খেলেন ভাপা পিঠা। খেয়ে দুজনে প্রশংসা করে বললেন, গ্রামের বাড়িতে হয়তো একদিন আয়োজন হবে। শীতের শুরুতে রাস্তার ধারে এমন আয়োজন সত্যিই ভালো।
বালিয়াকান্দির নারুয়া থেকে আসা মিঠু গোস্মামী বলেন, পেশাগত কাজে প্রতিদিন শহরে আসতে হয়। শীত পড়তে শুরু করলেও এখনো গরম গরম পিঠা খাওয়া হয়নি। তাই পিঠা আর ভর্তা খেয়ে দারুণ লেগেছে।