বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাম্প্রতিক সময়ের কিছু সিদ্ধান্তের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নিজের নামের আগে ‘দেশনায়ক’ বা ‘রাষ্ট্রনায়ক’ উপাধি ব্যবহার করতে নিষেধ করার পাশাপাশি, নিজের জন্মদিন পালনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তিনি দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে—এই পদক্ষেপগুলো কি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নাকি বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের সূচনা?
তারেক রহমানের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও দলের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং নেতৃত্বের পরিণত মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘চলুন আমরা শপথ নিই, এমন কোনো কাজ করব না যা জনসাধারণের আস্থা নষ্ট করে।’ এই বক্তব্যে একটি সুস্পষ্ট বার্তা রয়েছে—রাজনীতি জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যম, ক্ষমতা দখলের নয়।
তাছাড়া, তিনি দলীয় কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি কেউ মনে করেন, যাদের আমরা প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করতাম, তারা আর নেই বা দুর্বল হয়ে পড়েছে, আর আমরা সহজেই ক্ষমতায় চলে যাব—তাহলে এই চিন্তা পরিহার করুন।’ এই কথায় তার দূরদর্শিতা প্রকাশিত। তারেক রহমান মনে করিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ছোট করে দেখা ভুল। বরং, সংগঠনের ভিত শক্ত করা এবং জনগণের আস্থা অর্জন করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
তারেক রহমানের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বক্তব্য—‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অবসান ঘটাতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং এমন একটি নতুন অধ্যায় রচনা করি, যেখানে রাজনৈতিক মতপার্থক্যের জন্য আর কোনো পরিবার ধ্বংস হবে না।’ এটি শুধু একটি বক্তব্য নয় বরং রাজনীতিতে মানবিকতার মূল্যায়নের এক অসামান্য দৃষ্টান্ত। দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিহিংসা শুধু দলের ক্ষতি নয় বরং গোটা জাতিকে পেছনে টেনে ধরেছে। তিনি চান এমন একটি পরিবেশ, যেখানে ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
তারেক রহমানের এই সিদ্ধান্তগুলো শুধু বিএনপির জন্য নয় বরং দেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ধারার সূচনা হতে পারে। তিনি নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেয়ে দলের কল্যাণ এবং জনগণের আস্থা অর্জনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এমন নেতৃত্ব রাজনীতিতে সুস্থ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি গণতন্ত্রের বিকাশেও ভূমিকা রাখবে।
যদি দলের নেতাকর্মীরা তার এই আহ্বান অনুসরণ করেন এবং নিজেদের দায়িত্বশীল আচরণে পরিবর্তন আনেন, তবে বিএনপি আরও সংগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। একইসঙ্গে, রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিহিংসার চক্র ভেঙে একটি মানবিক, সহনশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি সম্ভব। তারেক রহমানের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিতে পারে।