দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা দিনাজপুরের হিলিতে কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড শীত। তিনদিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। সারাদিনই কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকে পুরো এলাকা। উত্তরের আরেক হিমপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়। পৌষের ঘন কুয়াশা ও প্রকট শীতে কাঁপছে এ জেলা। দুদিন ধরে ভোর থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকছে পঞ্চগড়। এছাড়া নওগাঁয় আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের দেয়া তথ্যমতে তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশার বরফ শিশির ও প্রবাহিত হিমেল হাওয়ার শীতে কাঁপছে উত্তরের এ জনপদ। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাতে বরফের মতো ঠাণ্ডা আবহাওয়া অনুভূত হচ্ছে।
হিলিতে আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে পুরো এলাকা। তবে রাতে ও সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝড়ছে। সাথে হিমেল বাতাশ শীতের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলেছে।
শীতের কারণে এ জেলায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষজন। কাজের সন্ধানে বাড়ি থেকে বের হলেও আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত নানা রোগে। শীতের কারণে সড়কে মানুষের চলাচল কমে গেছে। এতে আয় কমায় বিপাকে পড়েছেন ভ্যান ও রিকশা চালকরা। খড়কুটো জালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় দিনাজপুর অঞ্চলে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
নওগাঁয় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে আজ। বদলগাছী আবহাওয়া জানিয়েছে, নওগাঁয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
এ জেলাতেও দিনভর প্রকৃতি জুড়ে ঘন কুয়াশা ও শীতল বাতাশ বইছে। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। গত কয়েকদিন ধরেই নওগাঁয় ৯ থেকে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ঘরে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। মৃদু শৈত্য প্রবাহের প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। বিশেষ করে ছিন্নমূল, কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নওগাঁর সিভিল সার্জন ডাক্তার মো: নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া, শর্দি-কাশি ও শ্বসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। আক্রান্তদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
পঞ্চগড়ে আজ সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে পুরো জেলা। শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। শীতের কারণে প্রয়োজনের বাইরে অনেকে ঘরের বাইরে বের না হলেও নিম্ন আয়ের কর্মজীবি মানুষগুলো জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করে কাজে বেড়িয়েছেন ভোর-সকালে।
স্থানীয়রা জানান, গতকাল থেকে ঘন কুয়াশা। কাল সারাদিনই কুয়াশায় ঢাকা ছিলো পুরো অঞ্চল। দুপুরে কুয়াশা ভেদ করে কিছু সময় সূর্য দেখা গেলেও সে রোডে ছিল না কোনো তেজ।
বিকেল গড়ার সাথে সাথে শুরু হয় উত্তরীয় হিমেল হাওয়া। এ হাওয়ায় শিরশির করে শরীরে প্রবেশ করে শীত। বিকেল থেকেই গরম কাপড় পড়তে হয় গ্রামবাসীর।
গ্রামাঞ্চলে এমন প্রকট শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণে চেষ্টা করছেন ঘরের গৃহিনীরা। রাতে লেপ, কম্বল ও কাথা নিতে হচ্ছে। শীতের কারণে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছে মানুষ।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলায় মাত্র ২ হাজার কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তা বিতরণ করা হয়েছে। এজন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও সমাজের বিত্তশালীদের শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ জানান, আজ বুধবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালের তাপমাত্রা বাড়লেও কুয়াশা ও হিমবাতাসের কারণে শীতের প্রকোপে পড়েছে এ উত্তরের এ জনপদগুলো।
দৈনিক বিশ্ব অনুসন্ধান